শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক ::
খুব সুন্দর করে সেজেছেন আপনি, দারুণ পোশাক, পারফেক্ট মেকআপ৷ কিন্তু একটু কাছে গেলেই যদি কায়দায় সেট করা চুলের ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট ছোট্ট সাদা খুশকি ভেসে উঠতে দেখা যায়, তা হলে মনটা খারাপ হয়ে যায় না, বলুন? বিশেষ করে বছরের এই সময়টায়, শীতকালে খুশকির সমস্যা কম-বেশি সবাইকেই বড়ো বিব্রত করে৷ কেন হয় খুশকি? কীভাবেই বা তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তা জানতে চান?
কীভাবে মুক্তি পাবেন খুশকির হাত থেকে?
যারা স্ক্যাল্প সোরিয়াসিসে ভুগছেন, তারা ডাক্তারের বাতলে দেওয়া বিধি মেনে চলুন৷ কোনও প্রডাক্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারই দরকার নেই৷ বাকিদের জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির হদিশ দেওয়া হল৷
নিমপাতা: নিমপাতার সর্বরোগহর গুণের কথা কারও অবিদিত নয়৷ খুশকির প্রকোপ কমাতেও তা দারুণ কাজে দিতে পারে৷ এক মুঠো নিমপাতা পেস্ট তৈরি করে নিন৷ স্নানের এক ঘণ্টা আগে সেটা মাথায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে থাকুন৷ তার পর ভেষজ কোনও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিন৷ আগের দিন রাতে এই পেস্টটা লাগিয়ে পরদিন শ্যাম্পু করতে পারলেও খুব ভালো ফল পাবেন৷ পেস্ট লাগাতে চান না? এক মুঠো নিমপাতা ভিজিয়ে দিন এক মগ গরম জলে৷ সারা রাত এইভাবে রাখুন৷ পরদিন স্নান সেরে মাথা ধুয়ে নিন এই জলে, তাতেও নিয়ন্ত্রণে আসবে খুশকি৷ নিমের নিয়মিত ব্যবহার আপনার মাথার তালুর চুলকানি কমাবে, যে ফাঙ্গাসের কারণে খুশকির বাড়বাড়ন্ত হয়, সেগুলিকে ক্রমশ অকেজো করে দেয় নিমের নির্যাস৷
গ্রিন টি: শরীরের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে এই অ্যান্টি অক্সিডান্টসমৃদ্ধ চা৷ এক কাপ গ্রিন টি বানিয়ে নিন৷ তার মধ্যে মেশান কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল তেল আর এক চাচামচ কোনও ভালো মানের সাদা ভিনিগার৷ ঠান্ডা করে নিন৷ স্নানের আগে চুলটা ভিজিয়ে নিন সাধারণ তাপমাত্রার জলে৷ তার পর এই মিশ্রণ চুলে ঢালুন৷ ঘষে ঘষে মাথার ত্বকে মিশ্রণটা লাগিয়ে নিন পাঁচ মিনিট ধরে৷ তার পর কোনও মৃদু সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলটা ধুয়ে নিতে হবে৷ কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন৷ কন্ডিশনার কখনওই মাথার তালুতে লাগাবেন না৷ চুলের গোড়া থেকে আন্দাজ এক ইঞ্চিমতো ছেড়ে গোটা চুলের গায়ে কন্ডিশনার লাগান, তাতে চুল নরম থাকবে৷ ভালো করে ধুয়ে নিন মিনিট তিনেক পর৷
সঠিক শ্যাম্পু: খুশকি নিরাময়ের চেষ্টা করার আগে সুনিশ্চিত করুন যেন তা আপনাকে বিব্রতই না করতে পারে৷ সে জন্য নিয়মিত মাথায় শ্যাম্পু করা প্রয়োজন৷ চুল অপরিষ্কার হলেই ধুয়ে ফেলুন, মাথার তালুতে যেন বাড়তি তেল না জমতে পারে৷ শ্যাম্পুর ফেনা যেন চুলের ফাঁকে আটকে না থাকে, সেগুলি জমেও খুশকি হয় পরবর্তীকালে৷ শীতকালে কিন্তু আমাদের স্ক্যাল্পকে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মাথার সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডগুলি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাই চুলে বেশি তেলাভাব লক্ষ্য করতে পারেন৷ নিয়মিত শ্যাম্পু ছাড়া একেবারেই চলবে না এ সময়ে৷
নারকেল তেল আর টি ট্রি অয়েল: নারকেল তেলেরও কিন্তু ফাঙ্গাস তাড়ানোর আর চুলকে খুশকিমুক্ত রাখার ক্ষমতা আছে! 5 টেবিলচামচ নারকেল তেলের সঙ্গে 10 ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন৷ তার পর মাথার তালুতে ভালো করে মাসাজ করে নিন এই মিশ্রণ৷ পরদিন সকালে মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন৷ হাতে সময় না থাকলে অন্তত আধ ঘণ্টা এই মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে রাখুন৷ টি ট্রি অয়েল বজায় রাখবে চুলের প্রাকৃতিক ঝলমলেভাব৷
লেবুর রস লাগান স্ক্যাল্পে
লেবুর রস: পাতিলেবুর রস নিংড়ে নিন৷ তার পর সেটা মাথায় লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে নিন৷ লেবুর রসের অ্যাসিড ফাঙ্গাস বিনষ্ট করতে খুব কার্যকর ভূমিকা নেয়৷ বাজারচলতি যে কোনও অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ প্রডাক্টে থাকে ক্ষতিকর কেমিক্যাল৷ লেবুর রস তা থেকে মুক্ত৷ এক কাপ জলে একটি লেবুর রস মিশিয়ে শ্যাম্পুর পর চুল ধুয়ে ফেললেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়৷ যতদিন না পুরোপুরি খুশকিমুক্ত হচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন৷ কমলালেবুর খোসা শুকনো করেও পাতিলেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যায়৷ 3-4টি শুকনো কমলালেবুর খোসা আর আন্দাজমতো পাতিলেবুর রস ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন৷ তার পর সেই পেস্টটা মাথায় লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে চুল শ্যাম্পু করে নিন হালকা কোনও শ্যাম্পু দিয়ে৷ খুশকির পাশাপাশি সমস্ত দুর্গন্ধের হাত থেকেও মুক্তি পাবেন৷ সপ্তাহে 2-3বার রিপিট করা যায়৷
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: সমান পরিমাণ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার আর জল মিশিয়ে নিন, তারপর এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন আপনার শ্যাম্পুর পরিবর্তে৷ এই মিশ্রণ ফাঙ্গাসের বাড়বৃদ্ধি ও চুলকানি কমাতে খুব কার্যকর৷ তবে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার কখনওই সরাসরি চুলে লাগাবেন না৷ খুশকি না যাওয়া পর্যন্ত টানা ব্যবহার করতে পারেন৷
টক দইও খুব কার্যকর
টক দই: আপনার পুরো চুলে মাখানো যায়, এমন পরিমাণ দই দু’ দিন বাইরে ফেলে রাখুন৷ দইটা একটু টক হয়ে গেলে বেশি ভালো কাজ হবে৷ স্নানের এক ঘণ্টা আগে সেটা মাথায় খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন৷ স্ক্যাল্প তো বটেই, চুলের গায়েও লাগাবেন৷ মাস্কের মতো এই প্রলেপটা লাগিয়ে রাখুন৷ তার পর ভালো করে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন৷ দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাবে আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম, কোমল ও উজ্জ্বল৷ নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি মুক্ত থাকতে পারবেন৷
মনে রাখবেন:
খুশকি একেবারে গোড়াতেই নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি৷ কারণ একবার বাড়তে আরম্ভ করতে তার নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে৷ কেন খুশকি হচ্ছে, সেটা জানার চেষ্টা করুন৷
যদি খুশকি খুব বেড়ে যায়, তা হলে আপনার চুলের স্বাস্থ্যহানি হবে৷ মাথার তালু চুলকাবে বেশি, চুল পড়তেও পারে৷ তবে একবার খুশকি সেরে গেলে এবং মাথার তালু ফাঙ্গাসমুক্ত হলে ফের চুল গজাবে৷
Leave a Reply